ছেঁড়া গদ্য ১

তোমার মনে থাকবে না কারণ তুমি সেখানে ছিলে না। তোমার মনে থাকার কথা না কারণ তুমি ওখানে কোনদিন যাওনি। তোমার মনে থাকার কোন কারণই নেই যেহেতু তুমি ওদেশে জন্মাওনি। আমি ছিলাম। তোমার প্রেম আমায় সেখানে ছুঁতে পারেনি। বড় বড় বাড়ির ছাদের ওপর থেকে যে আকাশ দেখা যায় সেই আকাশে আমি ছিলাম। ছাদের ওপর থেকে নিচে উঁকি দিতে পারতাম না কারণ আমি তখন ছোট মানুষ। কিন্তু যা বুঝতাম তা হলো এই ছাদ থেকে রাস্তা বিশেষ দেখা যায় না। চারপাশে সব বাড়ি। ছোট বাড়ি, বড় বাড়ি, একতলা বাড়ি, পাঁচতলা বাড়ি। আমার বাড়িও পাঁচতলার ওপরে ছিল। একটা ছোট্ট হাঁসছানা আমার ছাদে ছিল। প্রথম যেদিন মা জামার নিচে সেমিজ পরিয়ে দিয়েছিল, আমি ভীষণ কায়দায় ছাদে খেলতে গিয়ে ওপরের জামাটা খুলে ফেলেছিলাম। টেলিভিশনে দেখেছিলাম তার আগে – মহিলা টেনিস প্লেয়ার ওপরের জ্যাকেট খুলে আমার সেমিজের মতোই দেখতে একটা পোশাক পরে খেলতে নামত। আমিও ব্যাডমিন্টন খেলছিলাম। আর পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল সেই হাঁসুখোকা।

Continue reading “ছেঁড়া গদ্য ১”

#মিটু, কোল্যাটেরাল ড্যামেজ এবং অক্টোবরের কলকাতা

#মিটু এবং বঙ্গসংস্কৃতির বর্তমান ঘোলাজল নিয়ে দু’কথা। গত সপ্তাহে কলকাতার নাট্যজগতের এক নামজাদা ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে আবার সোশাল মিডিয়া তোলপাড় হয়, সেই প্রসঙ্গে এই পোস্ট। দু’কথা ভাবছি বলেই ফেসবুকের বদলে ব্লগ পোস্ট করছি, এতে বেশি লেখা যায়।

১। প্রথম ভাবনা – রেপ, মলেস্টেশন এবং কোল্যাটেরাল ড্যামেজ

যেকোন ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে যখন আলোচনা হয়, তখন একটা কথা অবধারিতভাবে উঠে আসে, আর সেটা হল কোল্যাটেরাল ড্যামেজ। আমি কখনো কোন সারভাইভারকে বলতে শুনিনি যে তারা কোল্যাটেরাল ড্যামেজ হিসেবে কাউকে চিহ্নিত করছেন। কিন্তু যখনই কোন মানুষ, যে সেই ঘটনার ক্ষেত্রে পারপিট্রেটারও নয় আবার সারভাইভারও নয়, কোনপ্রকার সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স নিয়ে কথা বলেন তাদের মুখে খুব ঘুরেফিরে আসে কথাটা; কোল্যাটেরাল ড্যামেজ। যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই কোল্যাটেরাল ড্যামেজের জন্য ‘নিরীহ’ মানুষদের প্রাণনাশ অব্দি হয়। কথাটা-র গোদা বাংলা করলে দাঁড়ায়, যে বা যারা এইসব ভায়োলেন্স রিপোর্ট করছেন তারা পারপিট্রেটার ছাড়াও আরও অনেকের ক্ষতি করছেন এবং সেদিকে খেয়াল রাখছেন না। ভেবে দেখলে এই কোল্যাটেরালের ধারণাটাই – অর্থাৎ একজন যা খুশি করবে এবং তার জন্য আশেপাশে ঘটে যাওয়া ‘নিরীহ’ মানুষদের কথা একবারও ভাববে না – ভীষণ পিতৃতান্ত্রিক। কিন্তু ভাবার বিষয় হল, যৌনহেনস্থা রিপোর্টেড হবার ক্ষেত্রে তাহলে কী ধরণের কোল্যাটেরালের কথা সুধীজনেরা বলে থাকেন?

Continue reading “#মিটু, কোল্যাটেরাল ড্যামেজ এবং অক্টোবরের কলকাতা”

আপন এবং অযাচিত

১।
অনিন্দ্য’র সাথে আমার প্রেমের সূত্রপাত চিঠিতে। চিঠিতে অনেক কথা বলা যায় যা সামনাসামনি মাথায় থাকে না। আমার প্রেমের চিঠি লিখতে ভালো লাগে। পেতেও ভালো লাগে। লম্বা লম্বা চিঠি যেগুলো পড়ে নিজের সম্বন্ধে এক ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হয়। কিন্তু সেই ধারনাগুলো বড়ই মধুর। তাই প্রেমে পড়লেই আমি চিঠি লিখি। অনিন্দ্য’র সাথে আমার একটা ব্লগ-ও ছিল। সেখানে শুধুই একে অপরের জন্য লেখা কবিতা এবং গদ্য থাকত। সেই ব্লগে অন্যের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
এই কথাগুলো দিয়ে কেন শুরু করলাম? নিতান্তই ব্লগটা খুলব বলে এসব কথা বলা। আগের ব্লগ আর এটির মধ্যে যে প্রায় বছর দশেকের ব্যবধান সেটাই বলতে চাইছি। আর এর মধ্যে, মানুষ হিসেবে আমি যে অনেক পাল্টেছি সেটাও বলতে চাওয়া। আগে প্রেমের ধারণা যা ছিল তার থেকে অনেকটাই পাল্টেছে। এখন আমি বিশ্বাস করি, যে দুজন মানুষের একে অপরকে চাওয়ার উর্ধেও প্রেম আসলে একটা রাজনৈতিক সম্পর্ক। তাই প্রেমপত্রগুলো রইল শুধুই প্রেমিকদের জন্য। আর বাকি সব লেখা আমার। শুধুই আমার।

Continue reading “আপন এবং অযাচিত”